অভিনেত্রী রোমানার মূল টার্গেট প্রবাসীরা

অভিনেত্রী ও মডেল পরিচয়ে ফেসবুকে প্রেম করতেন প্রবাসীদের সঙ্গে। কখনো ডিভোর্সি আবার কখনো সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে নিতেন টাকা। পরে করতেন বিয়েও। কৌশলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন জায়গা-জমিও। বলছিলাম মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণার কথা।

প্রতারিতদের দাবি, মোট ২৮ জনের সঙ্গে এভাবে বিভিন্ন প্রতারণা করে বিয়ে করে রোমানা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাবেক স্বামীর কাছ থেকে এক কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারের বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, সৌদি প্রবাসী সাবেক স্বামীর মামলায় রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আশরাফি ইসলাম শেইলী (৬০), নাহিদ হাসান রেমি (৩৬), আন্নাফি (২০), ফারহা আহম্মেদ (৩০) ও অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (৩৭)।

প্রতারিত হওয়া এক প্রবাসী কামরুল ইসলাম জানান, রোমানা তার সঙ্গে প্রথমে ভাল সম্পর্কে করে। তারপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি দেশে আসার পর আমাকে বাসায় ডাকে। আমি যাই। গেলে তারা আমাকে কিছু একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর আমার খারাপ ছবি তুলে নেয় ও আমার থেকে স্ট্যাম্পে সাইন নিয়ে নেয়। এভাবেই সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। তার মোবাইল, ঘড়ি, গাড়ি আর সবই আমার কিনে দেয়া। আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বললেও তা মিথ্যা। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

পুলিশ জানায়, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে একই প্রক্রিয়ার প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, রোমানা, তার মা, তার ভাই ও ভাইয়ের বউ ও রোমানার ছেলে তারা সবাই এই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে আসার পর বাসায় নিয়ে উলঙ্গ করে তার ছবি তুলে তারা। এরপর টাকা দাবি করে বসে। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

উল্লেখ্য, রোমানা ইসলাম স্বর্ণা নিজেকে কখনো মডেল, কখনো অভিনেত্রী পরিচয়‌ দিতেন। খুলতেন আলাদা আলাদা ফেসবুক আইডি‌। আপলোড করতেন বিভিন্ন আপত্তিকর সব ছবি। এরপর প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। তারপর কখনো স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ আবার কখনো স্বামীহীন সংসারে আর্থিক অনটনের কথা বলে প্রবাসী ওইসব প্রেমিকদের কাছ থেকে নিতেন টাকা। ঠিক একইভাবে কখনো ফ্ল্যাট কেনা আবার কখনো গাড়ি কেনার নাম করে রোমানা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে এক বছরে বিভিন্ন সময়ে নেন আড়াই কোটি টাকা।